তিন কারণে ছাত্রদলে পদ পাচ্ছেন বিবাহিতরা

অনলাইন ডেস্ক •  তিন কারণে ছাত্রদলের কমিটিতে বিবাহিতদের রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটির অভিভাবক বিএনপি। বিবাহিতদের বাদ দিলে সংগঠনের মধ্যে কোন্দলের আশঙ্কা, নিয়মিত সম্মেলন না হওয়ায় বঞ্চিতদের সুযোগ দেওয়া এবং দীর্ঘদিন রাজপথে থাকা মাঠের সংগঠকদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে বিএনপি। তবে বিবাহিতদের এবারই শেষবারের মতো সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ছাত্রদলের কমিটিতে কেবল অবিবাহিতদেরই স্থান দেওয়া হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
ছাত্রদলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএনপির নেতারা বলছেন, ছাত্রদলের সর্বশেষ ষষ্ঠ কাউন্সিলের আগে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল নতুন কমিটিতে বিবাহিতদের পদ দেওয়া হবে না। কিন্তু তাদের বাদ দিয়ে কমিটি করা হলে যে বিদ্রোহ শুরু হবে তার আভাস পাওয়া যায় সদ্য বিগত কমিটির বিবাহিতদের গত পাঁচদিন ধরে চলা আমরণ অনশনে। ফলে সংগঠনের মধ্যে নতুন বিদ্রোহ ঠেকাতে বিবাহিতদের কমিটিতে না রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
পাশাপাশি সদ্য সাবেক ছাত্রদলের (রাজীব আহসান-আকরামুল হাসান) কমিটি দুই বছরের জায়গায় পাঁচ বছর পার করেছে এবং বিবাহিতরা ছাত্রদল করতে পারবে না তখন এমন কোনও নিয়মও ছিল না। ফলে নিয়মিত সম্মেলন না হওয়ায় পদবঞ্চিত বিবাহিতদের এবারের কমিটিতে ‘আলংকারিক’ পদ দেওয়া হবে। এছাড়া মাঠের রাজনীতির অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে বিবাহিতদের নতুন কমিটিতে রাখা হচ্ছে। তবে আগামীতে ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রে বিবাহিতরা ছাত্রদল করতে পারবে না এই ধারা যুক্ত করা হবে। ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন। তিনি বলেন, ছাত্রদলের সর্বশেষ কাউন্সিলে বিবাহিতদের না রাখার সিদ্ধান্ত ছিল। এখন তাদের কমিটিতে রাখার কোনও সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা আমরা জানি না।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এখন বিবাহিতদের কমিটিতে রাখা হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন। আজ (রবিবার) বিবাহিতদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাদের অনশন ভাঙিছেন দলের মহাসচিব। তিনি কোন সিদ্ধান্তের কারণে বিবাহিতদের অনশন ভাঙান তা আমরা জানি না। কারণ গত কয়েক দিনে আমাদের সঙ্গে তারেক রহমানের কোনও বৈঠক হয়নি। তিনি বলেন, বিবাহিতদের ছাত্রদলের কমিটিতে রাখা সিদ্ধান্ত হলে সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই। এখন সেই অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ কমিটি সাজাবো।
বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত পেয়েই বিবাহিত ছাত্র নেতাদের অনশন ভাঙাতে যান মহাসচিব মির্জা ফখরুল। মূলত বিবাহিতদের বাদ দিয়ে ছাত্রদলের নতুন কমিটি হলে যে বিদ্রোহ হতে পারে তা ঠেকানোর জন্য তাদের কমিটিতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারেক রহমান।
ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, বিবাহিতদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাদের অনশন ভাঙানোর মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান হয়ে গেলো। এখন আমাদের অভিভাবক তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেই অনুযায়ী আমরা কমিটি করবো।
ছাত্রদলের একটি সূত্র জানায়, সোমবার (৪ নভেম্বর) তারেক রহমানের সঙ্গে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে বিবাহিতদের রেখে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে।
বিবাহিদের ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রাখার দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যুক্ত ছিলেন সংগঠনটির সদ্যবিদায়ী কমিটির স্কুল বিষয়ক সম্পাদক আরাফাত বিল্লাহ খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অনশন ভাঙান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আমাদের জানিয়েছেন- বিবাহিতদের কমিটিতে রাখার বিষয়ে তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আগামীতেও বলবেন। আমাদের দাবির বিষয়টি ইতিবাচবকভাবে এগোচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বিবাহিতদের বাদ না দেওয়ার দাবিতে গত ৩০ অক্টোবর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করে আসছিল সংগঠনটির সদ্য সাবেক কমিটি অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। রবিবার (৩ নভেম্বর) তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিবাহিতদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান তিনি।